নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন

জন্ম নিবন্ধন  কি কেন

 জন্ম নিবন্ধন কি ? 

জন্মের  পর সরকারি  খাতায়  নাম  লেখানই জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধন  শিশুকে তার আইনগত নাগরিক  অধিকার  দেয়। শিশুটি  সেই  দেশের  বৈধ নাগরিক  এই স্বীকৃতি  সে জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে  পায়।

শিশুটি একটি  নাম পায় যা তাকে পরিচিতি  দান করে। দেশের  অনান্য নাগরিকের  সাথে  সে সমান অধিকার  পায় এই জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে। জন্ম নিবন্ধনের অধিকার  জাতিসংঘের শিশু সনদে স্পষ্ট  উল্লেখ  আছে।

জন্ম নিবন্ধন  আইনে  বলা হয়েছে, বয়স, ধর্ম, গোষ্ঠী  কিংবা জাতীয়তা নির্বিশেষে  সকল বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী সকলের  জন্য  জন্ম নিবন্ধন  করা বাধ্যতামুলক।

বাংলাদেশে ২০০৪ সালে জন্ম নিবন্ধন  শুরু  হয়। ২০১০ সাল থেকে  অনলাইনে  জন্ম নিবন্ধন  কার্যক্রম  শুরু  হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন  শেষে   নিবন্ধন  কতৃপক্ষ একটি  সাটিফিকেট  দেয়।

বাংলাদেশে সরাসরি  অথবা  অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন  কার্যক্রম  শুরু  হয়েছে। ৫৫ টি জেলায়  এবং  ১৭টি দূতাবাসে  এই কর্যক্রম পরিচালিত   হচ্ছে। 

এখন আমরা  জানবো জন্ম নিবন্ধন  কি  কি কাজে লাগে।  জন্ম নিবন্ধন  কি  কি  কাজে  লাগে  তা নিম্নে আলোচনা  করা  হলো :

বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধন  ১৬ টি কাজে লাগে। 

১। জন্ম নিবন্ধন  ছাড়া  ভর্তি  হওয়া  যাবে  না।

২।  Student দের বিকাশ Account   খুলতে  গেলে  জন্ম নিবন্ধন  দরকার। 

৩।ড্রাইভিং লাইসেন্সে জন্ম নিবন্ধন  দরকার  হয়।

৪।ভোটার  তালিকায়  নাম  তোলা  যাবে  না জন্ম নিবন্ধন  ছাড়া। 

৫।ভোটার  তালিকায় নাম  না উঠলে জমি রেজিষ্ট্রি  করা যাবে  না।

৬।সরকারি  টীকা  নেওয়ার  জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  দরকার  হয়। 

৭।জন্ম  নিবন্ধন  ছাড়া  পাসপোর্ট  করা  যাবে  না। 

৮।বিবাহ  নিবন্ধনের জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগে। 

৯।আমদানি  রফতানি  করার  জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগে। 

১০। ট্যাকস আইডি ফিকশন নাম্বার ( টি আই এন) প্রাপ্তির জন্য  জন্ম নিবন্ধন  লাগবে।

১১। ট্রেড লাইসেন্স  প্রাপ্তির জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগবে। 

১২। সরকারি, বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত  সংস্থায় নিয়োগের  জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগবে। 

১৩। ব্যাংক হিসাব খোলার  জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগবে। 

১৪। বাড়ির  নকশা  অনুমোদনের জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগবে। ১৫।গাড়ির  রেজিষ্ট্রেশন  প্রাপ্তির জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  লাগবে। 

সরকারি  বেসরকারি  যে কোন  সার্ভিস  নিতে গেলে  জন্ম  নিবন্ধন  ছাড়া  আপনি  হয়রানির  সম্মুখীন  হবেন। 

জন্ম  নিবন্ধন  না করলে  যে সব সমস্যার  সম্মুখীন  হতে  হয়।

১।স্কুলে  ভর্তি : 

বর্তমানে  স্কুলে ভর্তির জন্য  জন্ম  নিবন্ধন  চাওয়া  হয়। জন্ম  নিবন্ধন  না থাকলে মেধা থাকা  সত্বেও  ভালো  স্কুলে  ভর্তি  হওয়া  যায়  না।

২।জাতীয়  পরিচয় পত্র তৈরী :

জাতীয়  পরিচয় পত্র তৈরীর ক্ষেত্রে জন্ম  নিবন্ধন  দরকার  হয়। জন্ম  নিবন্ধন  ছাড়া  জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরী  অথবা ভোটার  আইডি  কার্ডের জন্য  আবেদন  করা  যাবে  না। ফলে ভোটাধিকার  থেকে  শুরু  করে বিভিন্ন  নাগরিক  সুযোগ  সুবিধা  থেকে  বন্চীত হতে  হবে। 

৩।পাসপোর্ট  তৈরি :

পড়াশোনা, ব্যবসা,জীবিকা, ভ্রমণ, চিকিৎসা  সহ বিভিন্ন  কাজে আমাদের  বিদেশে  যাওয়ার দরকার  হয়। বিদেশে  যাওয়ার  জন্য  পাসপোর্টের প্রয়োজন, আর এই পাসপোর্ট  তৈরি  করার  জন্য  জন্ম  নিবন্ধনের প্রয়োজন  হয়।পাসপোর্টেের আবেদন  ফরমের সাথে  জন্ম  নিবন্ধন  অথবা  জাতীয়  পরিচয়  পত্রের ফটোকপি  জমা  দিতে  হয়।

জন্ম  নিবন্ধন  না  থাকলে  পাসপোর্ট তৈরি  করা  যায়  না। ফলে  পাসপোর্টের জন্য  আবেদন ও করা যায়  না। 

৪।সরকারি  চাকরি  বা স্বায়ত্তশাসিত  চাকরি :

সরকারি  চাকরি  বা স্বায়ত্তশাসিত  চাকরির ক্ষেত্রে  জন্ম  নিবন্ধন  দরকার  হয়। আর জন্ম  নিবন্ধন  ছাড়া  এসব চাকরি ও পাওয়া  যায়  না। 

৫।বিয়ের নিবন্ধন :

বিয়ে  নিবন্ধনের  ক্ষত্রে জন্ম নিবন্ধনের দরকার  হয়। কারন জন্ম  নিবন্ধন  ছাড়া  জানা  যায়  না  পাত্র / পাত্রির বয়স।সুতরাং  বাল্য বিবাহ  হচ্ছে  নাকি এটি জানা  যায়  না। সুতরাং জন্ম  নিবন্ধন  ছাড়া  বিয়ের মত সামাজিক  কাজেও বাধা  তৈরি  হয়।

৬।সম্পওি ক্রয়- বিক্রিয় :

সম্পওি ক্রয় বিক্রিয়ের জন্য রেজিষ্ট্রেশনের সময় জন্ম  নিবন্ধন  অথবা  জাতীয়  পরিচয়  পত্রের ফটোকপি  প্রয়োজন  হয়। এই জন্ম  নিবন্ধন  না থাকলে  সমস্যার সম্মুখীন  হতে  হয়। 

৭।বয়স প্রমাণের জন্য  :

বিভিন্ন  অনাকাঙ্ক্ষিত  ঘটনার সম্মুখিন  হয়ে  শিশুরা বা  কিশোররা বিভিন্ন  অপরাধে জড়িয়ে  পরে।এর ফলে  তাদের  অপরাধের শাস্তি  দিতে গিয়ে  বিচারকদের জন্ম  নিবন্ধন  প্রয়োজন  হয়। 

এক্ষেত্রে  বিচার  শুরু  হওয়ার  আগে  অথবা  শান্তি  প্রদানের  আগে  তার  বয়স প্রমাণের প্রয়োজন  হয় 

আর এই  বয়স  প্রমাণের জন্য জন্ম নিবন্ধনের দরকার  হয়। 

জন্ম  নিবন্ধনের জন্য  আবেদন : 



জন্ম  নিবন্ধন  আবেদন  ফরমে কি কি লেখা  থাকবে তা নীচে  দেওয়া  হলো -

১।জন্ম  স্থান 

২।স্হায়ী  ঠিকানা 

৩।আপনি  যদি  বাংলাদেশ  দূতাবাসে  জন্ম  নিবন্ধন  আবেদন  করতে  চান,তবে এটি নির্বাচন  করবেন।

নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি

  • নামের  প্রথম অংশ
  • ( নামের  প্রথম  অংশ বাংলায়) 
  • নামের  শেষ  অংশ 
  • (নামের  শেষ  অংশ বাংলায়)
  • নামের  প্রথম  অংশ  ইংরেজিতে 
  • ( First name  in English) 
  •  নামের  শেষ  অংশ  ইংরেজিতে 
  • ( Last  name  in  English) 
  •  জন্ম  তারিখ ( খ্রীস্টাব্দ)
  • পিতা মাতার  কত তম সন্তান 
  • ( নির্বাচন  করুন) 
  • জন্ম  স্থানের  ঠিকানা 
  • দেশ
  • ( দেশ নির্বাচন  করুন) 
  • ডাকঘর (বাংলায়)
  • ডাকঘর(ইংরেজিতে) 
  • গ্রাম / পাড়া/মহল্লা 
  • গ্রাম /পাড়া/মহল্লা ( ইংরেজিতে) 
  • বাসা ও সড়ক  ( নাম,নম্বর) 
  • বাসা ও সড়ক  ( নাম,নম্বর ইংরেজিতে) 

উপরিউল্লিখিত ভাবে  জন্ম  নিবন্ধনের আবেদন  লিখতে  হবে। 

জন্ম  নিবন্ধন  যাচাই 

এটি করতে everify bdris,gov,bd  ভিজিট করে  জন্ম  নিবন্ধন  নম্বর  ও জন্ম  তারিখ YYYY-MM - DD  ফরম্যাটে লিখে  ফরম পূরণ  করতে  হবে। এরপর ক্যাপচা পূরণ করে Search বাটনে ক্লিক  করলে অনলাইনে  জন্ম  নিবন্ধন  যাচাই  হয়ে  যাবে। 

আপনি  এই কাজটি সরাসরি  Jonmo  Nibondhon Jachai. করার অফিসিয়াল  ওয়েবসাইট  থেকেও করতে  পারেন। 

নীচের  ধাপগুলির মাধ্যমে জন্ম  নিবন্ধন  যাচাই  করা  যাবে।

ধাপ -১  Birth and  Death Verification  সাইটে প্রবেশ  করুন। 

ধাপ -২ জন্ম  নিবন্ধন  নম্বর  প্রদান। 

ধাপ - ৩ জন্ম  তারিখ  প্রদান। 

ধাপ - ৪ ক্যাপচা সমাধান 

ধাপ - ৫ জন্ম তথ্য  অনুসন্ধান। 

ধাপ - ৬ জন্ম তথ্য  যাচাই। 

জন্ম  নিবন্ধন  যাচাই  কপি ডাউনলোড। 

যদিও  Jonmo  Nibondhon  Jachi করার অফিসিয়াল  ওয়েবসাইট  থেকে  কপি ডাউনলোড  করার কোনো অপশন  নেই। 

তবে আপনি  চাইলে  নীচের  পদ্ধতির মাধ্যমে  জন্ম  নিবন্ধন  যাচাই  করতে  পারবেন। ধাপ - ১ থেকে  ৬ অনুসরণ  করে  জন্ম  নিবন্ধন  তথ্য  যাচাই খুঁজে  পাওয়া  যায়। ওই পেজটি আপনার  স্কিনে থাকা  অবস্থায় আপনার  কম্পিউটার  থেকে   CTRL+P  একসাথে  চাপলে  আপনি  Print to  PDF নামক একটি  অপশন  পাবেন। সেটিতে  ক্লিক  করলে সহজেই   জন্ম  তথ্য  প্রিন্ট  করতে পারবেন।

যদি  প্রিন্টার না থাকে তবে  ডাউনলোড  করে সংরক্ষণ  করতে পারবেন। 

জন্ম  নিবন্ধন  কেন  যাচাই  করবো ? 

১।আপনার  জন্ম  নিবন্ধনটি ডিজিটাল  বা অনলাইন  কিনা তা জানার জন্য  জন্ম  নিবন্ধন যাচাই  করা  প্রয়োজন। বর্তমানে  প্রতিটি  ক্ষেত্রে ডিজিটাল  জন্ম নিবন্ধন  লাগে।

২।ইন্টারনেটের এই যুগে যে কোন  টুলসের মাধ্যমে জন্ম  নিবন্ধনটি যে কেউ চাইলে  নকল জন্ম নিবন্ধন  তৈরি  করতে  পারে। 

তাই জন্ম  নিবন্ধনটি আসল কিনা তা যাচাই  করার জন্য Jonmo Nibondhon  Jachaiকরা প্রয়োজন। 

৩।বর্তমানে  শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানে ভর্তি  হওয়া  থেকে  শুরু  করে  যে কোনো  সরকারি  আধাসরকারী  প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন  কাজে  জন্ম নিবন্ধন   লাগে। সেক্ষেত্রে  এটি  যাচাই  করা  বুদ্ধিমানের কাজ। 

৪।  নতুন ভোটার আইডি  কার্ড  তৈরিতে জন্ম  নিবন্ধন  থাকা  প্রয়োজন। কেননা  আপনার  জন্ম  নিবন্ধনের ভিওিতে আপনার  ভোটার  আইডি  কার্ড  তৈরি  করা  হবে। 

তাই  অবশ্যই একবার  হলেও   আপনার  জন্ম  নিবন্ধন  যাচাই  করে নিবেন।

উপরোক্ত  কারণগুলি ছাড়া  একটি  ডিজিটাল  জন্ম  নিবন্ধনের অনেক  প্রয়োজন  রয়েছে। 

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url